ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে অপার আইডি কার্ড (APAAR ID). খুব শীঘ্রই এই আইডি (Apaar ID Card) চালু হতে চলেছে। ভারতবর্ষের প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য এবার থেকে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হিসেবে কাজ করবে এটি। যা তাদের পুরো শৈশব জীবন এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যগুলো সংরক্ষণ করবে একসঙ্গে। আজকের প্রতিবেদনে রইল সেই সকল তথ্য যে অপার আইডি কীভাবে কাজ করবে এবং এর মাধ্যমে ভারতের শিক্ষার্থীরা কী কী সুবিধা পাবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
অপার আইডি কি?
তবে প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা দরকার যে অপার আইডি (APAAR ID) কি। ‘অটোমেটিক পারমানেন্ট একাডেমিক অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রি” (Automatic Permanent Academic Account Registry) এর সংক্ষিপ্ত রূপ অপার আইডি। এটি আসলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর, যা ভারতের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে দেওয়া হবে বলে জানা যায়। এই অপার আইডিতে থাকবে একজন ছাত্রের পুরো শিক্ষাজীবনের তথ্য।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- এর মধ্যে নথিভুক্ত থাকবে উক্ত শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল, সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের তথ্য, পড়াশোনার অর্জন। এছাড়াও নথিভুক্ত থাকবে স্কলারশিপ, খেলাধুলা, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ এমনকি সেই শিক্ষার্থীর শারীরিক তথ্য যেমন—রক্তের গ্রুপ, উচ্চতা, ওজন। এই সব কিছু সংরক্ষণ করা হবে। আবার, এই আইডির মাধ্যমে একজন ছাত্রের সমস্ত শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্যগুলি এক জায়গায় রাখা হবে।
অপার আইডির সুবিধা
কেন আপনি আপনার শিশুর জন্য অপার আইডি বানাবেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কি কি
সুবিধা রয়েছে অপার আইডির।
- অপার আইডির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীদের শৈশব তথ্য এক স্থানে সংরক্ষণ হবে, ফলে জাল সার্টিফিকেট বা ফলাফল তৈরির সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
- নির্ভুল তথ্য যাচাই: যেহেতু অপার আইডিতে শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল, স্নাতক সার্টিফিকেট, শিক্ষার্থীর পাওয়া স্কলারশিপ, এবং অন্যান্য সনদ জমা থাকবে তাই সেখান থেকে খুব সহজেই সেগুলি যাচাই করা যাবে।
- শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে সুবিধা: এই ওপার আইডির মাধ্যমে ছাত্রদের জন্য সহজে বিভিন্ন স্কলারশিপ, ভর্তি প্রক্রিয়া, ইন্টার্নশিপ এবং চাকরির সুযোগ যাচাই করাও সম্ভব হবে শিক্ষার্থীরা সুবিধা পাবেন।
- পোর্টেবিলিটি: যখন একজন ছাত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হবে, তখন তাদের শৈশিক রেকর্ড এবং তথ্য খুব সহজে ট্রান্সফার করা যাবে। এই সুবিধাও দেবে অপার আইডি।
- আধার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ: অপার আইডি আধার কার্ডের সাথে সংযুক্ত হবে। তাই যদি ছাত্র নাবালক হন তবে তার বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে তৈরি করা যাবে এই অপার আইডি।
যুবশ্রী প্রকল্প নতুন আপডেট! জেনে নিন 2024 যুবশ্রী প্রকল্পে কত টাকা ঢুকবে।
অপার আইডি কি আসলেই বাধ্যতামূলক?
আসলে মনে রাখা দরকার যে, এই অপার আইডি তৈরি করার জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়, তবে স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হবে যে শিক্ষার্থী দের জন্য অপার আইডি তৈরি করার আগে অতি অবশ্যই অভিভাবকদের অনুমতি নিতে হবে। যদি অভিভাবক কোনো কারণে সম্মতি না দেন, তবে সেই ছাত্রটির অপার আইডি তৈরি হবে না।
তবে প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর ২০২৬-২৭ সাল নাগাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে সমস্ত শিক্ষার্থীদের শৈশব রেকর্ড ১০০ শতাংশ ইন্টিগ্রেট করার জন্য। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই অপার আইডি ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা সহজ করবে এবং সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
অপার আইডি কিভাবে কাজ করবে?
এখন জেনে নেওয়া জরুরী যে এই অপার আইডি ঠিক কিভাবে কাজ করবে? জেনে নিন অপার আইডির একটি আলফানিউমেরিক কোড হবে, যা ছাত্রের সমস্ত শিক্ষাগত রেকর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে। এটি যুক্ত থাকবে ডিজিলকার (DigiLocker) সিস্টেমের সাথে। ঠিক যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পরীক্ষার ফলাফল, সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস নিরাপদে রাখতে পারবেন। এই আইডি কার্ডটি কাজ করবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডিজিটাল লকার হিসেবে যেখানে সংরক্ষিত থাকবে সমস্ত শৈশিক তথ্যগুলি। এগুলি ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা জীবন ও সাফল্য সহজেই ট্র্যাক করতে পারবেন।